লকডাউনের মধ‍্যে নজিরবিহীন ঘটনা জামালপুরে : মাতৃত্বের স্বাদ পেতে নিজের স্বামীর ফের বিয়ে দিলেন স্ত্রী

18th May 2020 বর্ধমান
লকডাউনের মধ‍্যে নজিরবিহীন ঘটনা জামালপুরে : মাতৃত্বের স্বাদ পেতে নিজের স্বামীর ফের বিয়ে দিলেন স্ত্রী


পার্থ ব‍্যানার্জী ( জামালপুর ) : বিয়ের পর থেকে ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও  সন্তান লাভ না হওয়ায় মনকষ্টে ছিলেন দম্পতি ।তাই সন্তান লাভের আকাঙ্খা পূরণের জন্য নিজে দাড়িয়ে থেকে অন্য এক তরুণীর সঙ্গে স্বামীর বিয়ে দিলেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী।শুধু বিয়ে দেওয়াই নয়। নব বধূ পারভিন খাতুনকে সঙ্গে নিয়েই আবুজাহির সাহানার প্রথম পক্ষের স্ত্রী সাহিলা বেগম হাসি মুখেই সংসার সামলাচ্ছেন। রোজাও পালন করছেন।নজির বিহীন এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে  স্তম্ভিত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার শাহহোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দারা।শুধুমাত্র মাতৃত্বের স্বাদ  পুরণের জন্য বধূ সাহিলা বেগমের এতবড় ত্যাগ শিকারের কথাই এখন ঘুরপাক  খাচ্ছে এলাকার মানুষজনের মুখে মুখে । জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শাহহোসেনপুর।দামোদর তীরবর্তী এই গ্রামের শেখ পাড়ায় বাড়ি বছর ৪২ বয়সী আবু জাহির সাহানার।অ্যাসবেস্টর্স চালার দুই কুটুরি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।  ২১ বছর আগে পেশায় রাজমিস্ত্রি আবুজাহিরের সঙ্গে রায়না থানার  মাঠনুরপুর গ্রামের তরুণী সাহিলার বিয়ে হয়।  বিয়ের পর থেকে তাঁদের সংসার জীবন সুখেই কাটছিল ।কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে বিয়ের দীর্ঘদিন পরেও সাহিলা সন্তানের জন্মদিতে না পারায়  আবুজাহির মনকষ্টেই দিন কাটাতেন।স্বামীকে মন কষ্টে থাকতে দেখে সাহিলা বেগমও যারপরনাই ব্যাথিত হতেন।শেষে স্বামীর সন্তান লাভের আকাঙ্খা পূরণের জন্য   সহিলা নিজেই নজিরহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। 

ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে গত ১১ মে সোমবার বছর ১৯ বয়সী তরুণী পারভিন খাতুনের সঙ্গে  দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আবুজাহির ।জামালপুরে বত্রিশবিঘা গ্রামে নববধূর বাপের বাড়ি।ওই দিন সেখানে উপস্থিত থেকেই সাহিলা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর স্বামী আবুজাহিরের সঙ্গে পারভিনের বিয়ে দেন।

কেন এতবড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সাহিলার কাছে । উত্তরে তিনি শোনালেন এক মর্মস্পর্শী  কাহিনী। সাহিলা বলেন,২১বছর আগে তাঁর সঙ্গে আবুজাহিরের বিয়ে হয়। কিন্তু  শারীরিক অক্ষমতার জন্য তিনি সন্তানের জন্ম দিতে পারেন নি।সন্তান লাভের জন্য  আনেক ডাক্তার, বদ্যিরও শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানের মা আর হতে পারেন নি । সেই কারণে তিনি যেমন মনকষ্টে ছিলেন তেমনই তাঁর স্বামী আবুজাহিরও মনকষ্টেই দিন কাটাতেন। এই  পরিস্থিতিতে তিনি নিজেই অন্য তরুণীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে  সহমত হন ।এরপর পাত্রী নির্বাচনেও তিনি মুখ্য ভূমিকা নেন। রবিবার সহিলা জানালেন , “পারভিনের সঙ্গে তিনি সুখেই স্বামীর ঘর করছেন ।পারভিন তাঁকে নিজের  দিদির মতোই ভালবাসে।পারভিনের গর্ভের সন্তানকেই তিনি নিজের সন্তান স্নেহে বড় করে তুলবেন । ওর  সন্তানই আমার মা হবার স্বাদ পুরণ করবে । ”এদিন পারভিন জানায় , ‘শ্বশুর বাড়িতে তাঁর কোন সমস্যা নেই । একই সঙ্গে সে হাসি মুখেই জানায় ,স্বামী আবুজাহির ও তাঁর  প্রথম পক্ষের স্ত্রী সাহিলার সঙ্গে  সে সুখেই সংসার জীবন কাটাচ্ছে ।’ আবুজাহির জানালেন, “সন্তান লাভ না হওয়ায় তিনি ও সাহিলা  মনকষ্টে থাকতেন। তাই সন্তান লাভের আকাঙ্খা পূরণের  জন্য তাঁর  প্রথম পক্ষের স্ত্রী সাহিলা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পারভিনের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে ।এমন মহত্মতা  ভোলার নয় ।এবার পরিবারে নতুন সদস্য আসলে তাঁরা সবাই খুশি হবেন । ”প্রতিবেশী  শেখ লিয়াকত আলি ও জরিনা বিবি বলেন , শুধুমাত্র মা ডাক শোনার জন্য সাহিলা দৃষ্টান্ত তৈরি করলো ।  শাহহোসেনপুর নিবাসী জ্যোৎশ্রীরাম  গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আরিফা মণ্ডল বলেন, এমন ঘটনা প্রকৃতই দেশের নারী মহলের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে । শুধুমাত্র সন্তান লাভের  জন্য এত বড় ত্যাগ শিকার অন্য কোন নারীরা হয়তো করতে পারবে না । 

 

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।